স্টার্টআপস - সুবিধা অসুবিধা - ফ্রেশারদের কি জয়েন করা উচিত?
গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরপরই অনেকেই উদ্ভ্রান্তের মত বিভিন্ন কোম্পানিতে এপ্লাই করতে থাকে। অনেকে হয়ত ইন্টারভিউতে ভালো করে এবং জব অফার পেয়েও যায় যার মধ্যে অনেক স্টার্টআপ কোম্পানিও থাকে। তো এই স্টার্টআপ কোম্পানি, বিশেষ করে স্টার্টআপ সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোতে জয়েন করা উচিত হবে কিনা তা নিয়ে ফ্রেশাররা প্রায়ই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। তাদের মনে প্রায়ই প্রশ্ন থাকে এগুলোতে জয়েন করা ঠিক হবে কিনা। তবে উত্তরটা সবার ক্ষেত্রে এক হবে না। বরং ব্যাপারটা অনেকটাই নির্ভর করবে ব্যক্তির চাহিদার ওপর। আমার নিজেরও কর্মজীবন শুরু হয়েছে একটা স্টার্টআপ সফটওয়্যার কোম্পানির হাত ধরে। মুলত আমার এবং পরিচিত অনেকেরই অভিজ্ঞতার আলোকে আজকের এই লেখাটি।
স্টার্টআপ কোম্পানি - যদিও আমরা মোটামোটি সবাই জানি কোন ধরনের কোম্পানি বা ফার্মগুলোকে স্টার্টআপ হিসেবে ধরা হয়, তবুও বলে নিই - "স্টার্টআপ হচ্ছে সেই ধরনের কোম্পানি যারা উদ্যোক্তা হিসেবে একটি বিজনেস মডেলকে মার্কেটে নিয়ে আসতে ছোট পরিসরে(বেশির ভাগ ক্ষেত্রে) প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিজনেস শুরু করে এবং যাদের শুরুর সময়টা ২-৩ বছরের বেশি নয়।" নিজেদের বিজনেস গোলে পৌছাতে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো শুরুর দিকটায় অনেক বেশি পরিশ্রম ও সময় দিতে চেষ্টা করে। এবং বেশিরভাগ স্টার্টআপই উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে আসে যাতে তারা মার্কেটে সাসটেইন করতে পারে।
স্টার্টআপে যাদের যোগ দেয়া উচিত কিংবা অনুচিত - স্টার্টআপে যোগদানে সুবিধা অসুবিধা দুইই আছে। এই দুটি বিষয় মিলিয়েই স্টার্টআপে যোগদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। দেখে নেই কাদের যোগ দেয়া উচিত এবং কাদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত-
যাদের উচিতঃ-
- যারা নিজেকে ফুল স্ট্যাক ডেভেলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাও তাদের জন্য স্টার্টআপ সফটওয়্যার ফার্ম ভালো অপশন। কেননা এই ধরনের ফার্মে প্রোজেক্টের প্রায় পুরোটাই বা বেশির ভাগ অংশেই ইনভল্ভড থাকতে হয়। শুধু তাই নয়, সঙ্গত কারনেই ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্মে ও কাজ করতে হয় বলে বিভিন্ন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখারও সুযোগ হয় যদিও স্টার্টআপ ছাড়াও সে সুযোগ হতে পারে, তবে স্টার্টআপে সুযোগ বেশি থাকে।
- স্টার্টআপে কাজের চাপ বেশি থাকে বলে দ্রুত কাজ শিখে নেয়া যায় কিংবা শিখে নিতে হয় যা পরবর্তীতে বেশ কাজে লাগে। যারা ভার্সিটিতে থাকাকালে খুব একটা প্রোজেক্ট করনি বা সুযোগ হয়নি তারা স্টার্টআপে জয়েন করতে পারো।
- পরিশ্রমী আর ডেডলাইন ওরিয়েন্টেড হতে পারলে প্রতিষ্ঠানকে নিজের গুরুত্ব বোঝানো সহজ হয় যেটা ক্যারিয়ারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- স্টার্টআপে অনেকগুলো এবং অনেক ধরনের কাজ একা করতে হয় বলে নিজের মধ্যে ম্যানেজারিয়েল গুনাবলী অ্যাডপ্ট করার সুযোগ হয়। সুতরাং যারা এই ধরনের গুনাবলী দ্রুত অর্জন করতে চাও তারা জয়েন করতে পারো।
- মুলকথা যাদের কাছে শুরুর মুহূর্তে টাকার চেয়ে কাজ শেখাটা বেশি জরুরী তারা স্টার্টআপে সুযোগ হলে জয়েন করতে পারো।
যাদের অনুচিতঃ-
- যারা অনেক বেশি স্কিল্ড, অনেক ভালো প্রোগ্রামিং প্রোফাইল আছে অথবা কাজের ভালো অভিজ্ঞতা আছে তাদের স্টার্টআপ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কেননা সুযোগ আসবেই।
- যাদের কোম্পানির কাছ থেকে এক্সপেকটেশন অনেক বেশি (যেমনঃ ভালো লীভ পলিসি, হাই সেলারী, প্রণোদনা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদি ) তাদের স্টার্টআপ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
- অনেক সময় কিছু স্টার্টআপ ভালো স্যালারি অফার করে। কিন্তু ক্যাপিটেল এর ঘাটতি কিংবা অন্যান্য কারনে অনেকেই সঠিক সময়ে বেতন দিতে ব্যর্থ হয় (যদিও এটা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে হতে পারে তবে স্টার্টআপে বেশি হতে দেখা যায়)। এই ধরনের পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করার মানসিকতা না থাকলে স্টার্টআপে জয়েন না করাই ভালো।
স্টার্টআপে জয়েন করার পূর্বে - উপরের ব্যাপারগুলো বিবেচনায় নিয়ে যদি কেউ স্টার্টআপে জয়েন করার সিদ্ধান্ত নাও, তাহলে যে বিষয় গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে-
- যে প্রতিষ্ঠানে জয়েন করতে যাচ্ছ সেখানে ম্যানেজমেন্ট প্যানেলে টেকনিক্যাল নলেজ সম্পন্ন কেউ আছে কিনা সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। এমনটা অনেক দেখেছি এবং শুনেছি যে ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল নলেজ সম্পন্ন না, যে কারনে তারা এমন সব রুল এপ্লাই করে যা প্রোগ্রামার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেশনের সাথে যায় না। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্ষোভ জন্মাবার আশংকা থাকে যা ক্যারিয়ারের জন্য মোটেও ভালো না। সুতরাং এই বিষয়টাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
- যে কোম্পানিতে/ ফার্মে জয়েন করতে যাচ্ছ তাদের পোর্টফোলিওটা দেখে নেয়া জরুরী। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই তাদের ওয়েবসাইটে নিজেদের পোর্টফোলিও প্রকাশ করে থাকে। পোর্টফোলিও দেখে অনেকটাই ধারনা করা যায় সেখানে কাজের সুযোগ এবং ব্যাপ্তি কতটুকু। সেইসাথে পছন্দের প্ল্যাটফর্মে কাজ করার সুযোগ আছে কিনা সেটাও জেনে নেয়া যায়।
- ক্যারিয়ারে শুরুর দিকের সময়টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই চেষ্টা করতে হবে বাসার কাছেই যেন অফিস লোকেশন হয়। এতে রাস্তায় সময় নষ্ট হবে না এবং এক্সট্রা কাজ করার সুযোগ থাকবে।
উপরের সবগুলো বিষয় ঠিকঠাক থাকলে আমি বলবো স্টার্টআপ জয়েন করতে পারো। শুরুর দিকটায় মুল লক্ষ্য থাক উচিত কাজ শেখা। জয়েন করার পর যদি দেখা যায় কাজ শেখার যথেষ্ট সুযোগ আছে, এবং স্ট্রাকচারড ওয়েতে কোড এবং ভার্সন কনট্রোলিং মেইনটেইন হচ্ছে , তাহলে বেশ কিছুদিন স্টে করা যেতে পারে।
পরিশেষে বলবো, স্টার্টআপ গুলো চেষ্টা করে যাচ্ছে ভালো কিছু করার। তবে ক্যারিয়ার বিবেচনায় স্টার্টআপ কেমন হবে এখানে সে বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরলাম মাত্র। সবার ক্যারিয়ার সাফল্যমণ্ডিত হোক সেই কামনা করছি।
ছবি সুত্রঃ ইন্টারনেট
Informative and directive article. May help for fresh CSE Engineer .
Thanks for your comment @Shah Imran.
Well informative post for the fresher's. Feeling good and thanks.
I appreciate your support. Thanks @Khondker Saiful Islam.
Nice article about startups. Hope you'll keep writing.